গোপালগঞ্জের সঙ্গে ৫ জেলার নৌযান চলাচল বন্ধ

নৌযান চলাচল বন্ধ – গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার মালেঙ্গা গ্রামের মাছ ব্যবসায়ী শহীদ মোল্যা। মধুমতী নদী দিয়ে নৌকায় করে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার উফরির সাপ্তাহিক হাটে মাছ বিক্রি করতে আসেন। বরাবরের মত শনিবারের হাটেও এসেছিলেন তিনি। কিন্তু এবার আর হাটের কাছেই নয় থামতে হয়েছে হাট থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন তিনি।

 

গোপালগঞ্জের সঙ্গে ৫ জেলার নৌযান চলাচল বন্ধ

 

মাছ ব্যবসায়ী শহীদ মোল্যা বলেন, মানিকহার সেতুর নীচে মধুমতী নদীতে কচুরিপানার স্তূপ হওয়ায় নৌকা নিয়ে সরাসরি হাটে যেতে পারিনি। ১ কিলোমিটার দূরে নৌকা থামতে হয়েছে। এতে মাছ মাথায় করে ও ভ্যানে করে হাটে নিতে হয়েছে। ফলে আমার যেমন সময় নষ্ট হয়েছে, তেমনি আর্থিক ক্ষতি হতেও হয়েছে। দ্রুত মধুমতী নদীর কচুরিপানা পরিষ্কার করার দাবি জানাই। শুধু শহীদ মোল্যা নয় এমন অবস্থা ওই এলাকার ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষের।

মধুমতি নদীতে কচুরিপানার স্তূপ জমা হওয়ায় নৌযান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়েছে। এতে ৫ জেলার সঙ্গে ১৫ দিন ধরে নদীপথে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে বাগেরহাট, পিরোজপুর, নড়াইল, বরিশাল ও খুলনায় খাদ্য, নির্মাণ সামগ্রী, জ্বালানি, কৃষি পণ্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন সামগ্রী পরিবহন ব্যাহত হচ্ছে।

 

 

উপজেলার উরফি ইউনিয়নের মানিকহার ব্রিজ এলাকায় সরেজমিনে দেখা গেছে, ছয় ভাগে ছয় গুচ্ছ পিলারের মাধ্যমে মধুমতি নদীর ওপর দাঁড়িয়ে আছে সেতুটি। প্রতিটি গুচ্ছে ফাঁকা ফাঁকা ছয়টি করে মোট ৩৬টি পিলার রয়েছে। এর মধ্যে পাঁচ সেট পিলারের অবস্থান নদীর পানিতে। এসব পিলারের ফাঁকে ফাঁকে কচুরিপানা ঢুকে আটকে গেছে। জমতে জমতে তা স্তূপে পরিণত হয়।

ব্রিজের নিচ থেকে স্তূপগুলো বিস্তৃতি লাভ করেছে প্রায় এক কিলোমিটার এলাকায় জুড়ে। বিশাল এ এলাকায় জুড়ে কচুরিপানা স্তুপ হওয়ায় চলাচল করতে না পারায় নদীতে নোঙ্গর করে আছে অসংখ্য নৌকা, ট্রলার ও কার্গো।

এদিকে, কচুরিপানার স্তুপ জমে যাওয়ায় ওখানকার পানি পঁচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এতে মশা-মাছির উপদ্রব বাড়ার পাশাপশি পানি ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। এতে চর্ম রোগসহ নানা ধরণের রোগ দেখা দিচ্ছে। এমনিক এখানে বেড়েছে সাপের উপদ্রোপ। গত শুক্রবার ৫টি ও শনিবার ৪টি সাপ মেরেছে স্থানীয়রা। এতে এলাকায় সাপ আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

এ ঘটনা জানার পর গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মহসিন উদ্দীন ও গোপালগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী এসএম রেফাত জামিল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

স্থানীয় বাসিন্দা ব্যবসায়ী শওকত খাঁ জানান, মধুমতি নদীর মাহিকহার ব্রিজ থেকে এক কিলোমিটার পযর্ন্ত কচুরিপানার স্তুপ জমেছে। এতে নৌযান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়েছে। এতে আমরা মালামাল আনা-নেয়া করতে না পরায় ব্যবসা-বাণিজ্যে ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।

google news
গুগোল নিউজে আমাদের ফলো করুন

 

বরিশালের সবজি ব্যবসায়ী শাওন মোল্লা জানান, এখন শীতের সবজির চারা বিক্রির ভরা মৌসুম চলছে। বরিশাল ও পিরোজপুর থেকে নৌকায় করে লাউ, কুমড়া, শিম, বেগুন ফুলকপি, বাধাকপিসহ বিভিন্ন সবজির চারা এনে গোপালগঞ্জে বিক্রি করি। কিন্তু কচুরিপানার কারণে নৌকা গোপালগঞ্জ শহর ও আশপাশের গ্রামের হাট বাজারে নিতে পারছি না।

এতে ব্যবসার মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। আমি দ্রুত এ সমস্যার সমাধান চাই। কার্গো চালক বশির মিয়া জানান, এই নদী দিয়ে আমরা ধান, চালসহ বিভিন্ন পণ্য খুলনা ও বরিশালে পরিবহন করি। কিন্তু মানিকহার ব্রিজের নিচে জমা কচুরিপানার স্তূপের ওপর দিয়ে কার্গো চালাতে পারছি না। তাই মানিকহার ঘাটে কার্গো নোঙ্গর করে বসে আছি। এতে আমাদের জীবন-জীবিকা অচল হয়ে পড়েছে।

উরফি ইউপির চেয়ারম্যান মনির গাজী জানান, জেলার প্রধান নদী মধুমতি দিয়ে পাঁচ জেলায় প্রতিদিন অন্তত ২শ’ নৌকা, ট্রলার, কার্গোসহ বিভিন্ন ধরণের নৌযান চলাচল করে। কিন্তু কচুরিপানার কারণে গত ১৫ দিন ধরে নৌপথ বন্ধ হয়ে গেছে। এতে পণ্য পরিবহন ও নৌচলাচল ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়া ব্রিজেরও ক্ষতি হচ্ছে। জনস্বার্থে কচুরিপানার স্তূপ অপসারণ করে দ্রুত নৌ চলাচলের ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান তিনি।

 

 

এ বিষয়ে গোপালগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী এসএম রিফাত জামিল জানান, বিষয়টি আমি লিখিত ও মৌখিকভাবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। কচুরিপানা অপসারণে ৬ থেকে ৭ লাখ টাকা প্রয়োজন। টাকা বরাদ্দ বা অনুমোদন পেলেই আমরা এটি শুরু করতে পারব।

 

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment